ভাবুন, ৫ বছর পরের আপনি কেমন হবেন?
একটা ভালোমানের চাকরি করবেন? নিজের একটা ছোট ব্যবসা? ফ্রিল্যান্সিং করে আয়?
আপনার স্বপ্ন যেটাই হোক, সেখানে পৌঁছানোর জন্য শুধু ইচ্ছা নয়,দরকার কিছু “ফিউচার রেডি স্কিল”।
এই ব্লগে থাকছে এমন ১০টি স্কিল, যেগুলো এখন থেকেই শেখা শুরু করলে ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় আপনি থাকবেন অনেক এগিয়ে।
১. AI & Machine Learning:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন শুধু সিনেমার বিষয় নয়। এটা আমাদের জীবনে ঢুকে গেছে অজান্তেই।
আপনি ফেসবুকে যেসব কনটেন্ট দেখেন, Netflix যেসব সিরিজ সাজেস্ট করে, কিংবা গুগল ম্যাপ যেভাবে পথ দেখায় সবকিছু AI এর মাধ্যমেই তৈরি হয়। আজ থেকে ৫/১০ বছর পরে যে মানুষটা ভালো AI এর ব্যাপারে কাজ জানবে সে সবচেয়ে ভালো পজিশনে থাকবে। ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বড় চাহিদা হবে এই সেক্টরে।
২. Digital Marketing:
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা প্রচার এবং বিক্রির একটি আধুনিক কৌশল। এটি আজকের যুগে ব্যবসায়িক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে যাই করুন না কেন? ব্যবসা, চাকরি বা ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড গড়া। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরার বিকল্প নেই। SEO, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল ক্যাম্পেইন। এগুলো শিখে আপনি নিজের দক্ষতাকে আরও বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
৩. Video Editing:
ভিডিও কন্টেন্ট বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকরী মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে যারা ভিডিও তৈরি এবং এডিটিং জানবে, তারা তাদের কনটেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সক্ষম হবে।
আপনি চাকরি খুঁজছেন? ভিডিও CV বানান।
শিক্ষক? ভিডিও লেকচার তৈরি করুন।
ক্রিয়েটর? Reels, Shorts, YouTube ভিডিও বানান।
সোজা কথাঃ ভিডিও এডিটিং এমন একটা স্কিল যার চাহিদা দিন দিন শুধু বাড়তেই থাকবে।
৪. Data Analysis:
ডাটা সায়েন্স এবং এনালাইসিস ভবিষ্যতের অন্যতম মূল্যবান স্কিল। এজন্যে বলা হয়ে থাকে “ডেটা ইজ দ্য নিউ অয়েল”। Data Analysis স্কিল আপনাকে বৃহৎ পরিমাণ ডেটা থেকে কার্যকরী এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনতে সাহায্য করবে।
কারণ ডেটা থেকেই ব্যবসার সিদ্ধান্ত, স্বাস্থ্যনীতি এমনকি নির্বাচনও নির্ধারিত হয়।
Excel বা Python-এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ শিখে আপনি হতে পারেন তথ্য বিশ্লেষণের মাস্টার। যেকোনো পেশায় এই স্কিল এখন এক্সট্রা নয়, প্রয়োজন।
৫. Leadership:
নেতৃত্ব মানেই বস হওয়া নয়। নেতৃত্ব মানে হলো দায়িত্ব নেওয়া, সাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, আর অন্যদের অনুপ্রাণিত করা। ভবিষ্যতে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হলে লীডারশিপ স্কিল অপরিহার্য। যদি আপনি নিজেকে বদলাতে চান, একটা টিম তৈরি করতে চান, কিংবা নিজের পরিবারেও সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা রাখতে চান এই স্কিল শেখা জরুরি।
৬. Team-work:
সবাই একা কিছু করতে পারে না। সফলতা আসে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে। একটা ভালো টিম জানে, কখন কথা বলতে হবে, কখন শুনতে হবে। আপনি যদি টিমে কাজ করতে না জানেন, তবে বড় প্রজেক্টে আপনাকে কেউ রাখতে চাইবে না। Office হোক, ফ্রিল্যান্সিং টিম হোক বা Startup সবাই খোঁজে এমন লোক, যে দল নিয়ে কাজ করতে পারে। আপনি যদি একসাথে কাজ করতে, মতবিনিময় করতে ও সহানুভূতিশীল হতে শিখেন, তাহলে যেকোনো জায়গায় আপনি মূল্যবান সদস্য হয়ে উঠবেন।
৭. Public Speaking:
নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা সবার নেই। কিন্তু যাদের আছে, তারাই সবার সামনে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেজেন্টেশন, ক্লাস রুমে আলোচনা, কিংবা স্টুডেন্টদের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় পাবলিক স্পিকিং স্কিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন ,ইন্টারভিউ, মিটিং, সেমিনার সব জায়গায় আপনার উপস্থিতি আলাদা হবে। স্পিকিং চর্চা করুন আয়নার সামনে, ছোট করে ভিডিও রেকর্ড করুন, বন্ধুদের সামনে প্র্যাকটিস করুন।
৮. Management skills:
এমন সময়ে আমরা বাস করছি যেখানে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, এবং কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সময়, কাজ ও মানুষকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারার ক্ষমতা মানেই ম্যানেজমেন্ট স্কিল। যারা পরিকল্পনা করে চলতে পারে, তারা শুধু সময় বাঁচায় না । বরং লক্ষ্যও দ্রুত অর্জন করে। তাই এ বিষয়ে আমাদের স্কিল অর্জন করা উচিত।
৯. Emotional Intelligence:
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা EQ একজন মানুষের মানসিক অবস্থাকে বুঝে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা। EQ মানে শুধু আবেগ নিয়ন্ত্রণ নয়। নিজের ও অন্যের অনুভূতি বোঝা এবং সেটার ওপর ভিত্তি করে কাজ করা। আপনি যদি নিজের রাগ, হতাশা বা চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এবং অন্যদের অবস্থাও বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবেন।
১০. Problem solving skills:
বক্সের বাইরে সবাই ভাবতে পারে না, আর যারাই এই অসাধারণ স্কিল অর্জন করতে পারেন তারা যেকোনো নতুন প্রজেক্টের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় করে তুলতে পারেন। যদিও এই স্কিল শেখা যায় না তবে যারা এই স্কিলের হয়ে থাকেন তারা যেকোনো জটিল প্রজেক্টের বেস্ট সল্যুশন বের করতে পারেন। প্রবলেম সলভিং স্কিল সবথেকে বেশি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। সব সময় যে সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে তাও না, তবে আপনি এগিয়ে যাবেন সফল ভাবে।
শেষ কথাঃ
এই ১০টি স্কিল আগামী দশকে আমাদের কাজের ধরন ও জীবনযাত্রাকে পরিবর্তন করবে। সময় বদলাচ্ছে, আর সেই সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের স্কিলও বদলাতে হবে। আপনারা যদি এগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে শিখতে শুরু করেন, তবে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের চাকরি বাজারেও নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
SHARE