আজকের দুনিয়ায় ইংরেজি শুধু একটা ভাষা নয়। এটা আপনার ক্যারিয়ার, শিক্ষা, ও আত্মবিশ্বাস গঠনের চাবিকাঠি। অথচ আমরা অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলার সময় ভয় পাই, অস্বস্তি বোধ করি, বা নিজেকে অপরিপূর্ণ মনে করি। এই সমস্যা আমাদের সবারই কমবেশি রয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছি তাঁদের মাঝে এই সমস্যাটি আরো বেশি প্রকট। আমরা সারা জীবনই ইংরেজির লিখিত ব্যবহার করে এসেছি। আমাদের মুখস্থ শব্দের ভান্ডার সুবিশাল। শব্দগুলো ব্যবহার করে তৈরি করে ফেলতে পারি সুন্দর সুন্দর বাক্যও। সাথে বাক্যগুলো হয় বেশ নির্ভুল। কিন্তু সমস্যাটা বাধে যখন কথা বলতে চাই ইংরেজিতে। এই জড়তা কাটাতে চাই ধাপে ধাপে এগোনো কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল। চলুন এমন কিছু পদ্ধতি দেখে নেই যাঁর মাধ্যমে অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই হয়ে উঠবেন ইংরেজিতে কথা বলায় দক্ষ।
১. ছোট করে শুরু করুন, প্রতিদিন নিজে নিজে প্র্যাকটিস করুন
ইংরেজিতে কথা বলা শেখা একদিনে সম্ভব না। তবে, প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট চর্চা আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। সকালে উঠে বা রাতে ঘুমানোর আগে নিজে নিজে কিছুক্ষন প্র্যাকটিস করে নিন। আজ সারাদিন কী কী করলেন এগুলো নিয়ে নিজের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে আপনার চর্চাও চালু থাকলো এবং একটু একটু করে আপনার ইংরেজিও গুছানো আকার ধারণ করা শুরু করবে।
অনেকেই ইংরেজি বলতে গিয়ে আগে ব্যাকরণ ঠিক করতে চান। যার ফলে কথা বলাটাই হয়ে পড়ে কঠিন।
আপনি কি বাংলায় কথা বলার আগে ব্যাকরণ নিয়ে ভাবেন? ইংরেজিতেও তাই করুন। ভুল হতেই পারে, ভুলের ভয় না পেয়ে চালিয়ে যান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকরণ ঠিক হয়ে যাবে। এজন্যে আপনি নিজে নিজে প্র্যাকটিস করতে পারেন। ভুল হোক, কিন্তু প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে হবে, তাহলে একটা সময়ে এসে আপনি টানা কথা বলতে পারবেন।
আয়নার সামনে কথা বলার একটা জাদুকরী শক্তি আছে। আপনি নিজের মুখের এক্সপ্রেশন, উচ্চারণ, বডি ল্যাংগুয়েজ সবই দেখতে পান। এতে আপনি নিজেই নিজের শ্রোতা, নিজেই নিজের সমালোচক। এটা শুধু আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, ভয় কাটাতেও দারুণ কাজ করে। এতে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন আপনার দুর্বলতা এবং শক্তির জায়গা গুলো।
অনেক সময় আমরা বলার আগে পর্যাপ্ত শুনতে ভুলে যাই। অথচ ভালো বক্তা হওয়ার জন্য আগে ভালো শ্রোতা হতে হয়। ইংরেজি সিনেমা, পডকাস্ট, ইউটিউব চ্যানেল এসব নিয়মিত শুনলে শব্দচয়ন, উচ্চারণ ও টোনের অনেক ধারণা পাওয়া যায়। আপনি যার সাথেই কথা বলুন না কেন, তার সাথে কথা বলার সময়ে আগে তার কথা গুলো পুরোপুরি শোনার চেষ্টা করুন। তারপরে গিয়ে উত্তর দিন। মনে রাখবেন, কথা শোনাও একটা বড় গুণ।
কারো সাথে কথা বলার সময়ে আমরা অনেকেই প্রথমে তাঁর কথা গুলোকে বাংলায় ভাবি, তারপর ইংরেজিতে অনুবাদ করি। যার ফলে ইংরেজি বলতে দেরি হয় এবং জড়তা আসে। এই সমস্যা কাটাতে চেষ্টা করুন তাঁর কথাগুলোকে ইংরেজিতে ভাবার। যেমন: “আমি বাসায় যাচ্ছি” এই কথাটিকে ভাবতে হবে “I am going home.” এভাবে অভ্যাস গড়লে মুখ থেকে স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি বের হবে।
সবসময় নিখুঁত ইংরেজি বলার চেষ্টা করলে নিজের মাঝে আলাদা একটা চাপ সৃষ্টি হয়। তার চেয়ে বরং যেটুকু পারেন, সেটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলুন। ভুল হলেও বলার চেষ্টা করুন, হয়তো হাসাহাসি হবে। হাসির মাধ্যমেই শিখুন, এগিয়ে যান। আত্মবিশ্বাস থাকলে মানুষ ভুলকেও গ্রহণ করে। এজন্যে আপনার এমন মানুষদের সাথে চলতে হবে যাঁরা ভুলের জন্য তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করে বরং আপনার ভুলগুলো থেকে আপনাকে শিখতে সাহায্য করে।
যতটা সম্ভব ইংরেজি কনটেন্ট দেখুন এবং শুনুন। সাবটাইটেলসহ মুভি দেখুন, মুভির ডায়ালগগুলো মুখে বলার চেষ্টা করুন। প্রিয় গানগুলো শুনে শুনে গাওয়ার প্র্যাকটিস করতে থাকুন। এতে আপনার ইংরেজির উচ্চারণ, শব্দভান্ডার, কথা বলার ধরণ সবই উন্নত হবে। আপনার অবসর সময়েও আপনার ইংরেজি শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এই প্র্যাকটিস।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতো ইংরেজি শিখতে চাওয়া মানুষদের নিয়ে ছোট্ট একটা গ্রুপ বানান। সেখানে প্রতিদিন একটা করে টপিক দিয়ে সবাইকে ঐ টপিকে কথা বলতে বলুন। একসাথে শেখার অভ্যাস আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে এবং ভয় কমাবে। একা একা আপনার যতটুকু শিক্ষা হবে এর থেকে গ্রুপ করে শিখার কারনে আপনি খুব সহজেই শিখতে বা প্র্যাকটিস করতে পারবেন। আর যেহেতু আপনারা সবাই একসাথে শিখতে চান তাই গ্রুপে শিক্ষার জন্যে লজ্জা ছাড়া আপনারা সবাই খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে শিখতে পারবেন। তাছাড়া এমন কিছু গ্রুপ আগে থেকেও বিদ্যমান থাকে যেখানে নিজে যোগ দিয়ে নিতে পারেন।
ভুল করা মানেই আপনি শিখছেন। আপনি যখন বুঝতে পারেন “আমি এটা ভুল বলেছি”, তখনই শিখছেন। চেষ্টা করুন একই ভুল যেন বারবার না হয়। প্রয়োজনে ভুলগুলো লিখে রাখুন এবং সময় নিয়ে ঠিক করে ফেলুন। মনে রাখবেন যে মানুষটা নিজের ভুল থেকে শিখতে পারে, তাঁর উন্নতি খুব তাড়াতাড়ি হয়। তাই নিজের ভুলগুলোকে শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলুন।
ইংরেজি শেখার পথে ধৈর্যই সবচেয়ে বড় সঙ্গী। একদিনে বা এক মাসে fluent হওয়া সম্ভব না। কিন্তু প্রতিদিন একটু একটু করে চর্চা করলে, এক সময় নিজেই দেখবেন আপনার জড়তা কোথায় হারিয়ে গেছে। ইংরেজি শিক্ষা কোন ১০০/২০০ মিটারের দৌড় নয়, এটা একটা ম্যারাথন দৌড় এর মতো। ম্যারাথন দৌড়ে যেমন দ্রুতগতির থেকে আস্তে দৌড় দরকার বেশি, ঠিক তেমনি ইংরেজি শিক্ষার জন্যে আপনার দ্রুত শিখার থেকে আস্তে শিক্ষাটা দরকার বেশি।
উপসংহার
যদি সঠিকভাবে প্রতিদিন প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ইংরেজিতে কথা বলার ভয় কাটানো সম্ভব। শুধু দরকার নিয়মিত চর্চা, সাহস এবং ধৈর্য। আপনার উচ্চারণ ভুল হতেই পারে, কিন্তু আপনি যে চেষ্টা করছেন, এটাই বড় কথা।তাই দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন। আয়নার সামনে দাঁড়ান, ছোট করে বলা শুরু করুন, ভুল করুন, আবার বলুন। আপনি চাইলে একজন অভিজ্ঞ Home Tutor এর সাহায্যও নিতে পারেন, যিনি আপনাকে গাইড করবেন কীভাবে আরও আত্মবিশ্বাসীভাবে উপস্থাপন করতে হয়।
SHARE