ভাবুন তো, এমন এক ইন্টারনেট সার্ভিস যা আর মোবাইল টাওয়ার, অপটিক ফাইবার বা কোনো কেবলে আটকে নেই! আপনি যেখানেই থাকুন পাহাড়ের চূড়ায়, দূরদূরান্তের দ্বীপে কিংবা দুর্গম কোনো গ্রামে মহাকাশ থেকে সরাসরি আপনার ফোন বা রাউটারে পৌঁছে যাচ্ছে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট।
স্টারলিংক হচ্ছে SpaceX কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ইতিমধ্যেই পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে, যেগুলো একসাথে কাজ করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়।
স্টারলিংক হচ্ছে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সিস্টেম, যা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে আমাদের পরিচিত মোবাইল বা ফাইবার ইন্টারনেট থেকে। এখানে মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে:
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা মূলত Low Earth Orbit (LEO) স্যাটেলাইটগুলোর উপর নির্ভরশীল। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর চারপাশে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘোরাফেরা করে, যেখানে সাধারণ (geostationary) স্যাটেলাইটগুলো প্রায় ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করে। এর ফলে LEO স্যাটেলাইটগুলো অনেক দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে, যার ফলে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ল্যাগ কম এবং গতি বেশি হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর।
স্টারলিংক ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে একটি বিশেষ “Starlink Kit” নিতে হয়, যার মধ্যে থাকে:
> একটি ডিশ অ্যান্টেনা (self-aligning)
> একটি Wi-Fi রাউটার
> কিছু পাওয়ার ও তার সংযোগ
এই ডিশটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্যাটেলাইটের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে এবং সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এতে ব্যবহারকারীর কোনো ম্যানুয়াল কনফিগারেশন প্রয়োজন হয় না।
এই অ্যান্টেনা “phase array” প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে এটি দ্রুত এক স্যাটেলাইট থেকে অন্য স্যাটেলাইটে স্যুইচ করতে পারে।
প্রত্যেকটি LEO স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো ইন্টারনেট ট্রাফিককে প্রধান সার্ভার নেটওয়ার্কে প্রেরণ করে, যা পুরো সিস্টেমের ব্যাকবোন হিসেবে কাজ করে।
স্টারলিংক প্রযুক্তি সাধারণ স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক উন্নত। এতে লেটেন্সি কম (২০–৪০ মি.সেকেন্ড) হওয়ায় ভিডিও কল ও গেমিং ভালো হয়। ইন্টারনেট স্পিডও অনেক বেশি (৫০ থেকে ২৫০ Mbps)। স্থির অ্যান্টেনার বদলে স্মার্ট অটো-ট্র্যাকিং ডিশ ব্যবহার হয়। এছাড়া স্টারলিংক অনেক স্যাটেলাইট একসাথে কাজ করে সারা বিশ্বে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট দেয়।
এক দৃষ্টিতে স্টারলিংক কাজের ধারা
এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে মিলিসেকেন্ডের মধ্যে!
এভাবেই কাজ করে স্টারলিংক এক বৈপ্লবিক প্রযুক্তি, যা ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছে।
স্টারলিংক এখন পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি দেশে চালু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশসহ আরও বিভিন্ন দেশ। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও স্টারলিংক ইন্টারনেট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
২৯ এপ্রিল ২০২৫ সবুজ সংকেত। এই দিনটি বাংলাদেশের প্রযুক্তি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতি ও BTRC’র অনুমোদনের মাধ্যমে Starlink এর বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার পথ খুলে যায়।
২০ মে ২০২৫ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু, ঠিক ২০ মে থেকে বাংলাদেশের সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরাসরি Starlink-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অর্ডার করতে পারেন। শহর হোক বা প্রত্যন্ত গ্রাম সবাই পেল আকাশ-ভিত্তিক ইন্টারনেটের ছোঁয়া। এটি ছিল দেশের ডিজিটাল কানেক্টিভিটির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
Starlink বাংলাদেশে শুরুতে চালু করেছে দুইটি মাসিক প্ল্যান :
⭐ প্যাকেজ নাম | 📶 গতি | 💵 মাসিক ফি | 🔄 ডেটা সীমা |
Lite | প্রায় ১০০ Mbps | ৪,২০০ টাকা | আনলিমিটেড |
Residence | প্রায় ২০০–৩০০ Mbps | ৬,০০০ টাকা | আনলিমিটেড |
একবার ডিভাইস কিনে নিলে পরবর্তী মাসগুলোতে শুধু প্ল্যান অনুযায়ী মাসিক বিল দিলেই চলবে।
SHARE