ওয়েব ডিজাইন বলতে কোনো একটি ওয়েবসাইটের গঠন বা নকশাকে বোঝানো হয়, যা ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। মূলত ওয়েবসাইটকে সুন্দর ও ব্যবহারবান্ধব ভাবে সাজানোর প্রক্রিয়াই হলো ওয়েব ডিজাইন।
সহজভাবে বললে, একটি ওয়েবসাইটের বাইরের রূপ অর্থাৎ দেখতে কেমন হবে, কোন জিনিস কোথায় থাকবে, রঙ কেমন হবে এসব নির্ধারণ করার কাজকেই বলা হয় ওয়েব ডিজাইন। যেমন, ফেসবুক আর টুইটার দেখতে একরকম নয়, কারণ প্রতিটি ওয়েবসাইট নিজস্বভাবে ডিজাইন করা হয়। তাই কোন ওয়েবসাইট দেখতে কেমন লাগবে, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে সেটি কীভাবে সাজানো হয়েছে তার ওপর।
ছোট থেকে বড় প্রায় প্রতিটা প্রতিষ্ঠানই তাঁদের ব্যবসা বা কার্যক্রমগুলোকে অফলাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনের দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী ওয়েব ডিজাইনের মার্কেটের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। তাই বলা যায় ওয়েব ডিজাইনের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। প্রতিদিনই নতুন নতুন ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে পাশাপাশি পুরাতন ওয়েবসাইটও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এছাড়াও ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা কেমন তা বুঝার জন্যে অনলাইন মার্কেটপ্লেস অথবা বিভিন্ন জব সার্কুলার এর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। সেখানে প্রচুর জব সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। তাই নিজেকে একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে খুব ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।
ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে যে আপনি শুধু চাকরি করেই ইনকাম করতে পারেন তা নয়, এর পাশাপাশি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করেও ভালো ইনকাম করতে পারবেন। ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম এসব অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রচুর চাহিদা রয়েছে ওয়েব ডিজাইনের। আপনি আপনার কাজের বিবরণ দিয়ে খুব সহজেই আপনার প্রোফাইল সাজাতে পারেন। এবং আপনার কাজের দক্ষতা ও পছন্দ অনুযায়ী কাজগুলো খুঁজে নিতে পারেন।
হয়তো শুরুর দিকে আপনার কাজ পেতে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে তবে আপনি যদি সঠিকভাবে আপনার কাজের দক্ষতাগুলো উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে কাজ পেতে সুবিধা হবে।
ওয়েব ডিজাইন শিখতে হলে শুরুতেই আপনার বেসিক কিছু জিনিস শিখতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো HTML। HTML একটি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ, যা কোডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধুমাত্র এইচটিএমএল শিখেই আপনি একটি সাধারণ ওয়েব পেজ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এর পাশাপাশি সিএসএস( CSS) এবং জাভাস্ক্রিপ্ট এ ও আপনাকে পারদর্শী হতে হবে। সিএসএস হলো HTML এর পরের ধাপ। এইচটিএমএল ব্যবহার করে আপনি হয়তো ওয়েব পেইজ তৈরি করলেন। কিন্তু পেইজ তৈরির পরে সাইটের ফন্ট কালার সাইজ, ইমেজ, ডিজাইন এগুলোর জন্যে আপনাকে সিএসএস জানা থাকা লাগবে। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটটি আরো আকর্ষণীয় লাগবে। ঠিক এর পরের ধাপই হলো Javascript। এটা শিখার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি পরিচালনার প্রক্রিয়ার সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনি নিজেকে একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে আপনার Javascript এর ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা লাগবে।
কোনো বিষয় কত দ্রুত শেখা যাবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির আগ্রহ এবং শেখার প্রয়োগ বা বাস্তব চর্চার উপর। যেমন, কেউ যদি শেখার প্রতি খুব আগ্রহী হয় কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী সময় না দেয়, তাহলে দ্রুত শেখা সম্ভব নয়। ধরুন, একটি বিষয়ে ভালোভাবে শেখার জন্য দিনে চার ঘণ্টা প্রয়োজন, কিন্তু আপনি সময় দিচ্ছেন মাত্র দুই ঘণ্টা তাহলে শেখার গতি স্বাভাবিকভাবেই ধীর হবে।
যেহেতু ওয়েব ডিজাইন কোডিং ভাষার উপর নির্ভরশীল, তাই এটি শেখার জন্য সময় ও নিয়মিত অনুশীলন খুব জরুরি। শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, হাতে-কলমে প্র্যাকটিস করলেই দ্রুত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে প্রতিদিন সময় দেন, তাহলে মাত্র দুই মাসেই ওয়েব ডিজাইনের মূল জিনিসগুলো ভালোভাবে শিখে নিতে পারবেন।
তবে এক্সপার্ট হতে হলে আপনাকে বাস্তব প্রজেক্টে কাজ করার অভ্যাস গড়তে হবে বিভিন্ন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বিষয়গুলো নিজে নিজে বুঝে নেওয়ার এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতাও গড়ে তুলতে হবে।
তবে শুধু ওয়েব ডিজাইন জানলেই চলবে না এর পাশাপাশি ওয়েব ডেভেলপমেন্টও শিখতে হবে। যেখানে ওয়েব ডিজাইন কিছুটা কম সময়ের মধ্যে শেখা সম্ভব, সেখানে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ভালোভাবে দক্ষ হতে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার আগ্রহ। যদি কাজের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ থাকে, তাহলে শেখার পথ অনেক সহজ হয়ে যায়। মনোযোগসহকারে নিয়মিত চর্চা করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি ওয়েব ডিজাইন ভালোভাবে শিখে ফেলতে পারবেন।
বর্তমানের যুগে ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। যেহেতু ওয়েবসাইট বানাতে ওয়েব ডিজাইনারের প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রচলিত চাকরির বাইরেও ওয়েব ডিজাইন হতে পারে আপনার নতুন পেশা। ওয়েব ডিজাইনকে পেশা হিসেবে বাছাই করতে আজ থেকেই ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরু করতে পারেন। এতে ভবিষ্যতে আপনার চাকরি না থাকলেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো ইনকাম করতে পারবেন।
তাহলে আর দেরি কেন? আপনার যদি ইচ্ছা থাকে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার, তাহলে শিখার শুরুটা হোক আজ থেকেই।
SHARE