চাকরি পাচ্ছেন না? ইউনিভার্সিটিতে স্যার-ম্যামদের সাথে ঠিকমতো কোর্স নিয়ে কথা বলতে পারছেন না? ইন্টারভিউতে বারবার বাদ পড়ছেন? অফিস মিটিংয়ে আপনার আইডিয়াগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না?
তাহলে সমস্যাটা হয়তো আপনার দক্ষতার ঘাটতি নয়, বরং সেটা কীভাবে উপস্থাপন করছেন তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে চাকরি হোক বা ব্যবসা, অফিস হোক বা ইউনিভার্সিটি, যেকোনো জায়গায় টিকে থাকার জন্য আপনার কমিউনিকেশন স্কিল অপরিহার্য। অর্থাৎ ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে প্রতিদিনের কাজে কমিউনিকেশন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। শুধুমাত্র সঠিক কমিউনিকেশনের অভাবে আমরা অনেক সুযোগ হারিয়ে ফেলি।
তাই, আজকের ব্লগে আমরা কথা বলবো কমিউনিকেশন স্কিলের এমন ৫টি টপিক নিয়ে যা যেকোনো বয়সে বা জায়গায় আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন শুরু করিঃ
আমরা অনেকেই মনে করি কথা বলার সময়ে বেশি কথা বললেই স্মার্ট প্রেজেন্টেশন হয়। আসলে, ভালো শ্রোতা হওয়া হলো এক নম্বর যোগ্যতা। আপনি আগে অন্যের কথা মন দিয়ে শুনলে তার প্রেক্ষিতে সঠিক ও প্রাসঙ্গিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবেন।
টিপস: মিটিংয়ে কারও কথা বলার সময় চোখে চোখ রাখুন, মাঝেমধ্যে মাথা নাড়ুন বা “ঠিক বলছেন” জাতীয় শব্দ ব্যবহার করুন। এতে আপনার কমিউনিকেশনের পাশাপাশি রেসপন্স স্কিলও উন্নত হবে।
ধরুন, আপনি কারো সাথে টানা ৫ মিনিট কথা বললেন, কিন্তু আপনার কথা উনি কিছুই বুঝলো না। তাহলে ঐ ৫ মিনিট কথা বলে কোনো লাভ হলো? ঠিক এ জায়গাতেই কমিউনিকেশন স্কিলের দরকার। নিজের ভাবনা যদি এলোমেলোভাবে উপস্থাপন করেন, তাহলে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই বলার আগে চিন্তা করুন- কী বলতে চাচ্ছেন, কোন পয়েন্ট আগে আসবে, কোনটা পরে। প্রয়োজনে এক লাইনেই শেষ করুন।
ভদ্র ভাষা, হাসিমুখ এবং নম্র ভঙ্গি। এগুলো এমন সফট স্কিল যা অনেক সময় কঠিন যোগ্যতার চেয়েও বেশি কাজে লাগে। মূলত কথার মধ্যে কাইন্ডনেস বা সহানুভূতি একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলে এবং পাওয়ারফুল কমিউনিকেশন তৈরি করতে সাহায্য করে। কথা বলার সময় কারো প্রতি বিরক্তি, অহংকার বা অবজ্ঞা প্রকাশ পেলে তা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কথায় আছে, জন্মের পরে মানুষের কথা বলতে লাগে প্রায় ২ বছর, কিন্তু কোন জায়গায় কোন কথা বলতে হবে এটা বুঝতে সারাজীবন লেগে যায়। বন্ধুর সাথে যেমন কথা বলেন, বস বা ক্লায়েন্টের সাথে তেমনভাবে কথা বললে ভুল হবে। যে কারো সঙ্গে কমিউনিকেশনের সময় তাঁর বয়স, পদমর্যাদা, অভ্যাস ও পরিস্থিতি মাথায় রেখে কথা বলার ধরন ঠিক করতে হবে।
আমরা কেউই শুরু থেকে কমিউনিকেশনে দক্ষ থাকিনা। সবারই কমিউনিকেশন স্কিল শুরুতে দুর্বল থাকে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার ভুলগুলোর যদি গঠনমূলক ফিডব্যাক দেয় এবং আপনি ঐ অনুযায়ী নিজের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেন, তাহলে প্রতিটি ভুলই আপনার পরবর্তী শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। চাকরিক্ষেত্রে হোক বা বন্ধুদের আড্ডা, সবজায়গাতেই নিজেদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর জন্য নিজেরা নিজেরা ফিডব্যাক নেওয়ার পদ্ধতি চালু করতে পারেন। এতে করে নিজেদের স্কিল আরো বৃদ্ধি পাবে।
কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করার ব্যাপারটা আসলে দুই/একদিনের কাজ না। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তাই প্রতিদিনই নিজের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর জন্য কিছু না কিছু করতে হবে। উপরে উল্লেখিত ৫টি বিষয়ে কাজ করতে পারলে আপনিও আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাই আজ থেকেই চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে গড়ুন। কারণ, কমিউনিকেশন হলো সেই স্কিল, যেটা আপনাকে শুধু চাকরি এনে দেবে না, বরং মানুষ হিসেবেও শ্রদ্ধার জায়গায় পৌঁছে দেবে।
SHARE